Rose Bee একটি পেন্ডিং ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট (ধারাবাহিক গল্পঃ পর্ব-১) Rose Bee

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৫:৫০:০৩ বিকাল



[ছয় পর্বের ধারাবাহিক গল্প]

Rose Rose

"... নতুন বিয়ে করেছে এক যুবক।

বিয়ের দ্বিতীয় দিনে নিজের বেডরুমের ফ্যানের সাথে ফাঁস লাগিয়ে মরে গেল। হাতের মেহেদী শুকানোর আগেই জীবন থেকে সব রং মুছে গেলো মেয়েটির। সে বুঝতেই পারলো না মানুষটির মনে কি ছিলো। ভাল ভাবে সবে চলার শুরুটা মাত্র করতে যাচ্ছিল...জীবনকে নতুন ভাবে স্পর্শ করে করে সামনে আগানোর রঙিন পরিকল্পনাকে মানুষটি এভাবে নিমিষে শেষ করে দিলো? পরিবারের সবার চোখের নির্বাক প্রশ্নগুলো তীরের মত বিঁধছে বউটির মনে। অনুচ্চারিত ফিসফিস শব্দগুলো যেন যুবকটির মৃত্যুর জন্য তাকেই দায়ী করছে।অথচ সে নিজেও এখন এক ঘোরের ভিতর রয়েছে। মনে হচ্ছে এটা এক দুঃস্বপ্ন! ঘুম ভেঙ্গে গেলেই উঠে দেখবে মানুষটি ওর পাশে হাসি মুখে ওর একটা হাত তার নিজের হাতে নিয়ে বসে আছে..."

বেরসিক কন্ডাক্টরের ডাকে বইটা ভাজ করে ওর দিকে তাকালো। কপালের ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, ' ভাড়া একবার দিলাম না তোমাকে?' কন্ডাক্টর একটু লজ্জার ভাব করে দুঃখপ্রার্থনা করে চলে যায়। কিন্তু যা করার সেটা তো করেই দিয়েছে। যাত্রা পথে বই এর ভিতরে ডুবে থেকে মজা নেয়াটা আর হলনা শিহাবের। প্রচুর বই পড়ার নেশা। অফিসে-বাসায় তো আছেই। এমনও সময় গেছে টয়লেটেও বই হাতে ঢুকতে দেখে ওর উপর সে কি রাগ করেছে জেসমিন। বাচ্চারাও এই আত্মভোলা সোজা বাপটাকে অনেক ভালবাসে। তাই মায়ের থেকে বাবাকেই ওদের পছন্দ বেশী। ডিজিটাল স্কেলে মাপলে ০.২৫০ সুচক বেশী তো কম হবে না।

বইটা ল্যাপটপের ব্যাগের সাইডের চেইন খুলে রেখে দিলো। আজ একঘন্টা আগে বসের কাছ থেকে ছুটি নিয়েছে। সাভার ইপিজেডে একটা বিদেশী আন্ডার গারমেন্ট ফ্যাক্টরীতে কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স এ সহকারী ম্যানেজার হিসেবে শিহাব জব করছে। সাধারণত অফিসের মাইক্রোতে যাতায়াত করে। তবে আজ আগে যাওয়াতে পাবলিক বাসে করে ব্যাঙ্ক টাউনের বাসায় যেতে হচ্ছে।

এই অবরোধের ভিতরেও কিছু বাস চলাচল করছে। ইপিজেড থেকে নবীনগর পর্যন্ত কোনো রিস্ক থাকে না সেনানিবাস এলাকা এবং আশুলিয়া থানা থাকাতে। কিন্তু বিশমাইল থেকে শুরু করেই পিকেটারদের স্বর্গরাজ্য শুরু হয়। জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটির জন্য যে কোনো সরকারের আমলেই এলাকাটা রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে একটু বেশীই উত্তপ্ত থাকে।

সামনে একটা জটলার মত দেখা যাচ্ছে। কিছু হৈচৈ ও শোনা গেলো। একটা আতংক গ্রাস করলো শিহাবের মনের ভিতরে। কেন জানি মনে হলো এই বুঝি বাসটি উড়ে গেলো কিছু নামহীন পিকেটারের ছুড়ে দেয়া গান পাউডার মিশ্রিত এক বা একাধিক পেট্রোল বোমার আঘাতে। শরীরের ভিতরে হৃদয় থেকে একটা অস্বস্তি তৈরী হয়ে বের হবার পথ খুঁজে না পেয়ে আবার সেখানে ফিরে এলো। বাস ভর্তি মানুষ। সকলের চেহারায় বিশেষ কোনো ভাব নেই। এরাই আমজনতা। আতঙ্কের ভিতরে বাস করতে করতে এদের পাথরে খোদাই চেহারার ভিতরে যে হৃদয়টা আছে, শিহাবের মনে হলো, বোধহয় সেখানে এখন আর কোনো ভাবের উদয় হয় না। তবে সে তো আর ভাব বিশেষজ্ঞ নয়। তার ভুলও হতে পারে।

জটলা কাটিয়ে এলো ওদের বাস নিরাপদে। গোপনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। এভাবে আরো কয়েকটি ঘাটি পার হতে হবে বাসায় পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত। বিরোধী দল ও সরকারী দল - কেউই কারো কথা নমনীয় ভাবে শুনতে চায় না। মাঝখান থেকে আমজনতার নাভিশ্বাস।

সে কি আমজনতার ভিতরে পড়ে?

নিজেকে জিজ্ঞেস করে। কারণ একজন নাগরিক হিসেবে সব ধরণের সুবিধা সে ভোগ করছে। কিন্তু দেশের প্রয়োজনে, দেশের ক্রান্তিলগ্নে কখনো তো সে রাজপথে নামে না। অফিসে কলিগদের সাথে চা এর টেবিলে কথার ফুলঝুরি ছুটানো পর্যন্তই তার দৌড়। শুধু তার কেন? সকল কলিগেরাই চিন্তার ক্ষেত্রে আর এই সীমানা অতিক্রম করতে পারে না।

তবে দেশের সরকার এবং বিরোধী দলের নেতাদের কাছ থেকে তার মত কিছু সুবিধাবাদী 'আমজনতার'ও কিছু চাইবার আছে। ওরা নিজেদের হ্যান্ডসাম স্যালারির একটা নির্ধারিত অংশতো ইনকাম ট্যাক্স হিসেবে নিয়মিত দেয়। বিভিন্ন শপিং মল বা সুপার স্টোর থেকে কেনাকাটার পরে ভ্যাট দেয়। জমির খাজনা দেয়। এমনকি চৌকিদারি ট্যাক্সও যার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সে দেয়।

তবে কেন অফিস থেকে বাসায় যাবার সময়টুকুতে পুড়ে কয়লা না হবার নিরাপত্তাটুকু সরকার আমাদেরকে দিতে পারবে না???

… ….

ডোরবেলের আওয়াজে ছোট মেয়ে এসে দরোজা খুলে দেয়। বাবাকে দেখে জড়িয়ে ধরে। নিত্যদিন এই ধরাধরির পরেও এর ভিতরের লুক্কায়িতো মজা শেষ হয় না। বরং প্রতিদিন বেড়েই চলে। সারাদিনের পরিশ্রম এবং টেনশন এক নিমিষে দূর হয়ে গেল শিহাবের। বড় মেয়ে পড়ার টেবিলে। তার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। সেও বাবাকে দেখে একটু হাসি দিয়ে ওয়েলকাম জানালো। শিহাবও পড়াশুনার খোঁজ নিয়ে জুতার বক্সে জুতো জোড়া রেখে বেডরুমের দিকে আগায়।

জীবনটা প্রতিদিনই একই রকম। সকালে অফিসের গাড়ীর হর্ন শুনে বাসা থেকে বের হওয়া। জেসমিনের দরোজা বন্ধ করতে এগিয়ে আসা... তাকিয়ে থেকে চোখে চোখে কিছু বলা... কোনো কোনো দিন উপরি হিসেবে যাবার বেলায় অন্য কিছু একটা পাওয়া- যার রেশ সেই ইপিজেড পৌঁছানোর পরেও থেকে যায়। মাঝে মাঝে তো কলিগদের কেউ চেহারার হাসি আর উজ্জলতাটুকু দেখতে পেয়ে চোখ মটকে জিজ্ঞেসও করে, ‘কি ব্যাপার ভাই? এতো আনন্দ!’

হ্যা! আনন্দ তো আছেই জীবনে। কিন্তু সেই সাথে দুঃখটাও রয়েছে সমান পরিমাণে। আনন্দটা দেখা যায়। সেটা প্রকাশ করতে হয় না। কিন্তু দুঃখটা? সেটা প্রকাশ না করলে কি বোঝা যায়? তবে অনেকে আছে দুঃখটা বেশী ইনিয়ে বিনিয়ে প্রকাশ করতে ভালবাসে।

দুঃখকে ভালবাসে?

হ্যা, এটাও এক ধরণের দুঃখ বিলাস। কারো কারো জন্য।

জেসমিন বিছানায় বসে বসে মেয়ের জন্য কি যেন লিখছে। দুই মেয়ের লেখা-পড়ার সব দায়িত্ব এখন জেসমিনের উপরে। শিহাব বন্ধের দিনগুলোয় বড়মেয়েকে নিয়ে বসে। ভালই কেটে যায় সেই সময়গুলো বাবা-মেয়ের।

জেসমিন লিখা থেকে চোখ তুলে তাকায়।

একটু হাসে!

এই সেই হাসি যা দেখে শিহাব ওকে পছন্দ করেছিল। মনে হয়েছিল একে না পেলে বেঁচে থেকে আর কি লাভ? কত পাগলামি যে সে করেছিল...

দুজনের ভিতরে আর কোনো কথা হয় না। ফ্রেশ হতে শিহাব ব্যস্ত হয়ে পড়ে। জেসমিন লেখাটা দ্রুত শেষ করতে চায়। শিহাব এলে ওর কাছাকাছি থাকার জন্য মেয়েদের সাথে এখনো কেমন যেন একটা প্রতিযোগিতা নিজের ভিতরে লক্ষ্য করে। একজন মানুষকে ঘিরে তিনজন মেয়ের প্রতিযোগিতা।

একটু লজ্জা পেল জেসমিন। প্রতিযোগিতা কেন ভাবছে সে? ওরা চারজনে মিলেই না একটা সম্পুর্ণ অংশ। এর একজন না থাকলে মনে হবে বিশাল এক অপুর্ণতা। আসলে শিহাবের প্রতি ওর ভালবাসাটা একই রকম রয়েছে মনে হয়।

মনে হয়?

কেন আজ এই বিয়ের ১৪ বছর পার করে দিয়ে এসেও অনিশ্চিত থাকতে হয়? একটু বিব্রত বোধ করে... একটু কি অপরাধবোধে ভোগে? শিহাব কি ভাবে অনেক জানতে ইচ্ছে করে জেসমিনেরও। ওর মনের ভাবনাটাও যদি জানতে পারতো!

মেয়ের খাতাটা বন্ধ করে নাস্তা বানাতে কিচেনের দিকে চলে যায়।

বুকের ভিতর অনিশ্চিত ভালোবাসা কানায় কানায় পুর্ণ করে ভালবাসার ছোয়া দিয়ে কিছু একটা করতে চায়- যা দিয়ে ওর বন্ধুর প্রতি ওর ভালবাসাটার পরিমাপ করা যায়। Rose Rose

(ক্রমশঃ)

বিষয়: সাহিত্য

১০৭০ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

266100
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ । চলুক
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:০২
209943
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।
শুভেচ্ছা রইলো নিরন্তর।Happy Good Luck
266108
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫০
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : Thumbs up. অপেক্ষায় রয়লাম পরবর্তী কিস্তির।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৭:৫৮
209938
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ বন্ধু!
অনেক অনেক শুভেচ্ছা সাথে থাকবার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Happy Good Luck
266128
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩৯
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : সাথেই আছি চলতে থাকুন আপন গতিতে....।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৭:৫৯
209939
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে সাথে থাকবার জন্য। আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম!
অনেক শুভেচ্ছা রইলো।Happy Good Luck
266130
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫১
ফেরারী মন লিখেছেন : বুকের ভিতর অনিশ্চিত ভালোবাসা কানায় কানায় পুর্ণ করে ভালবাসার ছোয়া দিয়ে কিছু একটা করতে চায়- যা দিয়ে ওর বন্ধুর প্রতি ওর ভালবাসাটার পরিমাপ করা যায়।

অসম্ভব ভালো লাগিলো। চালিয়ে যান। থামার দরকার নেই। Rose Thumbs Up Thumbs Up
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:০০
209940
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে নান্দনিক মন্তব্যের জন্য।
ইনশা আল্লাহ লিখে যাচ্ছি।
অনেক ধন্যবাদ সাথে থাকবার জন্য।Happy Good Luck
266236
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:১৩
কাহাফ লিখেছেন : আনন্দ আর কিছুটা দূঃখ নিয়েই গড়ে উঠে সুখী সার্থক একটি পরিবার,দূঃখের পরিমান টা এর চেয়ে বেশী হলেই এলোমেলো হয়ে যায় সাজানো জীবন,তখন ...........
আপনাদের অনাবিল সুখের কামনায়...... অনেক ধন্যবাদ ।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:০১
209941
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ সাথে থাকবার জন্য।
অনেক শুভেচ্ছা রইলো।Happy Good Luck
266317
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪০
স্বপ্নচারী মুসাফির লিখেছেন : অনেক ভালো লাগল, চলুক
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:০৩
210025
mamun লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনার ভালো লাগার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Happy Good Luck
266355
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:০৫
আফরা লিখেছেন : আনন্দ তো আছেই জীবনে। কিন্তু সেই সাথে দুঃখটাও রয়েছে সমান পরিমাণে। আনন্দটা দেখা যায়। সেটা প্রকাশ করতে হয় না। কিন্তু দুঃখটা কারো কাছে প্রকাশ না করাই ভাল ।যদিও তা অনেক সময় চেহারই ফুটে উঠে ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File